top of page

আদিবাসী ও টেকসই উন্নয়ন (এসডিজি)

  • Writer: Admin
    Admin
  • Jan 16, 2022
  • 4 min read

Updated: Feb 4, 2022

সারাবিশ্বে ৪৭ কোটিরও বেশি আদিবাসী মানুষের বসবাস। বিশ্বের সাত হাজারেরও অধিক ভাষায় কথা বলে এবং একই সাথে পাঁচ হাজারেরও অধিক বিভিন্ন সংস্কৃতির প্রতিনিধিত্ব করছে। যদিও তাদের সংখ্যা বিশ্ব জনসংখ্যার মাত্র ৫ শতাংশের বেশি। বিশ্বের দরিদ্রতম জনসংখ্যার ১৫ শতাংশই আদিবাসীরা। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আদিবাসীরা প্রাান্তিক হয়ে পড়েছে। তাদের অধিকার লঙ্ঘন করা হচ্ছে। তাদের ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, রীতিনীতি, ভাষা ও অস্তিত্ব আজ সঙ্কটাপন্ন।





পৃথিবীতে আদিবাসী মানুষের অবদান এবং বৈচিত্র্যময় সমৃদ্ধ সংস্কৃতির স্বীকৃতিসরুপ প্রতি বছর ৯ আগস্ট “বিশ্ব আদিবাসী দিবস” উদযাপন করা হয়। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ ১৯৯৪ সালে আর্ন্তজাতিক আদিবাসী দিবস পালন শুরু করে। এইদিনে আদিবাসীদের অধিকার সংগ্রামের আন্দোলন এবং বৈচিত্রময় সমৃদ্ধ সংস্কৃতিকে উদযাপন এবং স্বীকৃতি দেয়া হয়। একই সাথে বিভিন্ন দেশের সরকার ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে স্মরণ করিয়ে দেয়া হয়, তারা যে আদিবাসীদের সুরক্ষার জন্যে যে অঙ্গীকার করেছিল তা কতটুকু বাস্তবায়ন হয়েছে। আদিবাসী মানুষেরা তাদের অধিকার, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, রীতিনীতি, ভাষা ও অস্তিত টিকিয়ে রাখার জন্যে আজও সংগ্রাম আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে।


আদিবাসীদের নিজস্ব সংস্কৃতি এবং রীতিনীতি থাকলেও তাদের বিভিন্ন বাস্তবতার মুখোমুখি হতে হয়। তাদের পৈতৃক ভূমি থেকে উচ্ছেদসহ বিভিন্ন ধরণের নির্যাতনের শিকার হতে হয়, যা অন্যায্য এবং মানবাধিকার লঙ্ঘন। আদিবাসীরা বহু বছর ধরে আত্মনিয়ন্ত্রনের অধিকার, স্বকীয় সংস্কৃতি, জীবন জীবিকা এবং ঐতিহাসিকভাবে বসবাসসরত ভূমির স্বীকৃতি চেয়েছে। কিন্তু সরকার সেসবে কোনো কর্ণপাত করেনি। উল্টো তাদের বিভিন্নভাবে জোড় জুলুম ও অত্যাচারের সম্মুখীন হতে হয়েছে।


অধ্যাপক ড. আবুল বারকাত তাঁর ‘পলিটিক্যাল ইকোনমি অব আনপিপলিং অব ইনডিজেনাস পিপল: দ্য কেইস অব বাংলাদেশ’ গবেষণা গ্রন্থে উল্লেখ্য করেছেন, ‘২৭ বছর আগে পার্বত্য চট্টগ্রামে আদিবাসী মানুষের অনুপাত ছিল ৭৫ শতাংশ। এখন তা ৪৭ শতাংশ। গত তিন দশক ধরে ওই অঞ্চলে আদিবাসী কমছে আর বাঙালিদের সংখ্যা বাড়ছে। একই সাথে আমলা প্রশাসনের যোগসাজশে আদিবাসীরা বসতভিটা ভূমি-বনাঞ্চল দখল করেছে। তিনি তাঁর গবেষণায় দেখিয়েছেন, গত ৬৪ বছরে সমতলের ১০টি আদিবাসীদের ২ লাখ ২ হাজার ১৬৪ একর জমি কেড়ে নেয়া হয়েছে, যার দাম প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা। অধ্যাপক আবুল বারকাত তাঁর গবেষণায় আদিবাসীদের জমিজমা এবং বসত বাড়ি থেকে উচ্ছেদের ১৬টি কৌশলের কথা উল্লেখ্য করেছেন। এইসব কৌশলের মধ্যে রয়েছে সরকারি সামাজিক বনায়ন, খাস সম্পত্তি রক্ষা, ন্যাশনাল পার্ক বা জাতীয় উদ্যান, ট্যুরিস্ট সেন্টার প্রতিষ্ঠা, ইকো পার্ক স্থাপন, ভূমি জরিপ, বিদ্যুৎ উৎপাদন, শত্রু সম্পত্তি আইন, ভুয়া দলিল, গুজব ছড়িয়ে সংঘাত, দাঙ্গা, জোড় জবরদস্তি, ভীতি সৃষ্টি প্রভৃতি।”


এই পরিস্থিতিতে, আদিবাসীরা বিশেষ করে তরুণরা তাদের ভবিষ্যত সম্পর্কে এবং স্বল্প এই জীবনে বিভিন্ন ধরণের পরিস্থিতি এবং বাস্তবতা বিশেষ করে সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়। একই সময়ে, আদিবাসী তরুণদের আদিবাসী মানুষ হিসাবে তাদের অধিকার, সংস্কৃতি এবং আত্মপরিচয় নিশ্চিত করতে তাদের সংগ্রাম আন্দোলন করতে হয়।


আদিবাসীদের বেশিরভাগ সম্প্রদায় প্রত্যন্ত অঞ্চলে বাস করে যেখানে মানসম্পন্ন শিক্ষা, স্বাস্থ্য, যোগাযোগ ও অন্যান্য পরিষেবার অভাব রয়েছে । এছাড়াও, আদিবাসী তরুণরা আরও অনেক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হন যেমন, বৈষম্য, ভাষা ও সাস্কৃতিক আগ্রাসন, বেকারত্ব, জোড় করে পৈতৃক ভূমি থেকে উচ্ছেদ ও ভূমি হ্রাস, পরিবেশ দূষণ, শহরে অতিব্যাপক হারে অভিবাসন, আদিবাসী নারীদের যৌন নির্যাতন, নিরক্ষরতা এবং বাদ পড়া, মিথ্যা মামলা, কারাবরণ এবং আইনী সুরক্ষা না থাকা।


বিশ্বনেতারা টেকসই উন্নয়নের জন্য ১৭টি লক্ষ্যমাত্রা গ্রহণ করেন। ২০৩০ এজেন্ডা আদিবাসী ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীসহ সব নাগরিকের অর্ন্তভুক্তিমূলক উন্নয়ন নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে। ১৭টি টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার মূল উদ্দেশ্যই হলো কাউকে পেছনে না ফেলে একসাথে এগিয়ে চলা। যা আদিবাসী ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য এবং গুরুত্বপূর্ণ। আদিবাসীদের মধ্যে শিক্ষার হার জাতীয় গড় মানের তুলনায় অনেক কম। ভাষাগত সমস্যা, দারিদ্র্যতা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে সুযোগের স্বল্পতা, সম্পদের অপ্রতুলতা, সহপাঠী ও শিক্ষকদের কুসংস্কারমূলক আচরণ এবং মনোভাব। যার কারণে আদিবাসী শিশুরা অনেক আগেই শিক্ষা থেকে ঝড়ে পড়ে।


এছাড়াও টেকসই উন্নয়নের বেশ কিছু লক্ষ্যমাত্রায় আদিবাসীদের বিষয়গুলো উঠে এসেছে। বিশেষ করে আদিবাসী শিশুদের জন্য শিক্ষার সমান সুযোগ নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে। এছাড়াও আরও কয়েকটি লক্ষ্যমাত্রায় আদিবাসীদের জীবনের সমষ্টিগত ভূমি অধিকার ইত্যাদি তুলে ধরা হয়েছে। এছাড়াও মানবাধিকার, সমতা, বৈষম্যহীনতা যা আদিবাসী জাতিসমূহের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।


ভেরিয়ার এল্যুইন তার ‘আদিবাসী জগৎ’ বইয়ে লিখেছেন “আদিবাসী মানুষদের সঙ্গে যোগাযোগের জন্যই আমার জীবনের সর্বাধিক প্রয়োজনীয় মূল্যবোধের অধিকাংশ জন্মেছে, বেড়ে উঠেছে। আমি ওদের ওপর যতুটুকু না প্রভাব বিস্তার করেছি, ওরা আমার ওপর তার চেয়ে অনেক বেশি প্রভাব বিস্তার করেছে। আনন্দের গুরুত্ব, সরলতার গুরুত্ব ওরাই শিখিয়েছে আমাকে। বর্ণ ও ছন্দের প্রতি আসক্তি আমার মনে সাড়া ফেলেছে।” আদিবাসীদের এই সরলতার জন্যেই তাদের অনেককিছু হারাতে হয়েছে। মহাশ্বেতা দেবীর বিখ্যাত ‘টেরোড্যাকটিল পূরণ সহায় ও পিরথা’ উপন্যাসে শংকরের মত আক্ষেপ করে বলতে হয়েছে, “কেন এল ভিনদেশি মানুষ? আমরা রাজা ছিলাম, প্রজা হলাম। প্রজা ছিলাম, দাস হলাম। অঋণী ছিলাম দেনাদার করে দিল। দাস করে বেঁধে রেখে দিল হায়! নাম দিল হারোয়াহি, নাম দিল মহিদার, নাম দিল হালি, নাম দিল কামিয়া। দেশ চলে গেল, ঝড়ের মুখে ধূলোর মত চলে গেল জমি, ঘর, সব। যারা এল তারা তো মানুষ নয়। হায় হায়! পাহাড়ে উঠে ঘর বাঁধি, রাস্তা আমাদের তাড়া করে আসে। অরণ্য চলে যায়। চারিদিকে ওরা অশুচি করে দেয়। পূর্ব পুরুষের সমাধি ছিল। হায় হায়! তা গুঁড়িয়ে মাড়িয়ে সেখানে হল পথ, বাড়ি, স্কুল, হাসপাতাল, এর কোনটা আমরা চাইনি। আমাদের জন্যও করেনি। ... আমরা শেষ হয়ে যাচ্ছি, মুছে যাচ্ছি মাটি থেকে। তাই পূর্ব পুরুষদের আত্মা এখন ছায়া ফেলে ঘুরে যাচ্ছে।” একই উপন্যাসে লেখক বলেছেন, “আদিবাসীদের সমাজব্যবস্থা, মূল্যবোধ, সংস্কৃতি চেতনা, সভ্যতা, সব মিলিয়ে যেন নানা সম্পদে ভরা এক মহাদেশ, আমরা মূল¯্রােতের মানুষেরা সে মহাদেশকে জানার চেষ্টা না করেই ধ্বংস করে ফেলেছি তার অস্বীকার করার পথ নেই।” এই কথাগুলো যখন পড়ছিলাম সাথে সাথে আমার চোখে বার বার ভেসে উঠছিল সাজেকের সেই পর্যটকদের ছবি ও ভিডিও। যা আমি কিছুদিন আগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেখেছিলাম। লুসাই আদিবাসীদের পোষাক পড়ে হিন্দি গানে নৃত্য করছিল। কিন্তু আমরা কী জানি সেখানকার স্থানীয় আদিবাসীদের সাথে কি হয়েছিল বা ঘটেছিল?


২০১৬ সালের নভেম্বরে গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে সাঁওতালদের গ্রামে হামলা ও আগুন দেয়া হয়েছিল। পুড়ে ছাড়খার করে দেয়া হয়েছিল সাঁওতালদের ঘরবাড়ি। পুড়িয়ে দেবার পড় ট্রাক্টর দিয়ে চাষ করে তা সমান করে দেয়া হয়েছিল। যেন বুঝা না যায় এইখানে কোন বসত বাড়ি ছিল। সেই সময় বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং লিখেছিলেন “উন্নয়নের অনেক কথা এখন বলা হচ্ছে। কিন্তু এই উন্নয়ন কার জন্য? গাইবান্ধায় গিয়ে ওই সাঁওতাল কৃষককে কি কেউ জিজ্ঞেস করবেন তাঁর দিন কীভাবে চলে? তাঁদের পূর্বপুরুষের জমিজমার খবর কী?” দেশের একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে, আমার বা আপনার কাছে কী এই প্রশ্নের উত্তর আছে? সাজেকের স্থানীয় আদিবাসীরা আজ কোথায় ? এইসব প্রশ্নের উত্তর কী আপনার জানা আছে?


এসডিজি বা টেকসই উন্নয়নের কথা বলা হচ্ছে। আমরা যদি সত্যিই সবাইকে নিয়ে এগিয়ে যেতে চায়, তাহলে প্রথমেই প্রয়োজন একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে, এই দেশের আদিবাসী, সংখ্যালঘু, শ্রমিক-কৃষক-দিনমজুর হরিজন, চা শ্রমিকদের প্রতি আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি বদলানো। এবং সেই সাথে মহাশ্বেতার দেবীর মত বলতে হবে “ভালোবাসা, প্রচন্ড নিদারুন ভালোবাসা পারে, এ কাজে এখনও আমাদের ব্রতী করতে শতাব্দীর সূর্য্য যখন পশ্চিম গগনে, নইলে ভীষণ দাম দিতে হতে হবে এই আগ্রাসী সভ্যতাকে।” আমরা কী প্রস্তুত সবাইকে নিয়ে সামনে এগিয়ে যাবার জন্যে?


প্রকাশিত: Click here


Comments


S__58408971_0.jpg

About Me

"Committed to empowering youth, advocating for the rights of indigenous peoples and environmental justice, driving social transformation...,"

Follow me 

  • Facebook
  • Instagram
  • Twitter

Join My Mailing List

Thanks for submitting!

© 2023-2024  by ©wnokrek

bottom of page