top of page

‘অসাম্প্রদায়িক, উন্নত ও মানবিক বিশ্ব দেখতে চাই’

  • Writer: Admin
    Admin
  • Jan 16, 2022
  • 5 min read

Updated: Feb 4, 2022

সবুজের দেশ, ফুলের দেশ, সৌর্ন্দয্যের দেশ ইন্দোনেশিয়া। বহু জাতি, বহু মানুষ, বহু ভাষা, বহু সংস্কৃতির এক বিচিত্র দেশ এই ইন্দোনেশিয়া। আমার কাছে মনে হয়েছে, বৈচিত্র্য ও একতা আর সহিষ্ণুতাই ইন্দোনেশিয়ার সৌন্দর্য্য। এদেশের সংবিধানই ইন্দোনেশিয়াকে এভাবেই পরিচিত করেছে। ইন্দোনেশিয়ার মূলভাব “একতায় সৌর্ন্দয্য’’। বাক্যটা অসম্ভব রকম ভালো লেগেছে। আরেকজন মনীষী বলেছেন, বৈচিত্র্যই সৌন্দর্য্য। আমি ইন্দোনেশিয়ার এ সৌর্ন্দয্যে মুগ্ধ হয়েছি। বার বার প্রেমে পড়েছি। সত্যি বলছি, ইন্দোনেশিয়ার প্রেমে পড়ে গেছি।

ইন্দোনেশিয়াই যেতে পারবো চিন্তা করিনি। কিন্তু হঠাৎ করেই এ সুযোগটি পেয়ে গেলাম আইএমসিএস এশিয়া প্যাসিফিকের মধ্য দিয়ে। এশিয়ান ইয়ুথ একাডেমি ও এশিয়ান থিওলজি ফোরাম "Asian Youth, Champion for Building a New World: Centering on Peace, Sustainable Developments, Ecological Justice" এই মূলসুরকে কেন্দ্র করে ২২-৩১ জুলাই ২০১৭ খ্রিষ্টাব্দ ইন্দোনেশিয়ার জোগজাকার্তায় ১৬টি দেশের অংশগ্রহণকারীদের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত হয়েছে। এবারও যেতে পারবো জেনে একধরণের উত্তজেনা অনুভব করছিলাম। কেননা এটা আমার জন্য দ্বিতীয়বার হবে। অনেক পুরোনো ও নতুন মুখের সাথে দেখা হয়েছে, কথা হয়েছে, বন্ধুত্ব হয়েছে।


এশিয়ান ইয়ুথ একাডেমি ও এশিয়ান থিওলজি ফোরাম এ অসাধারণ ট্রেইনিংটি প্রতি বছর এশিয়ান লে লিডারস ফোরাম আয়োজন করে। যার নেতৃত্ব আছে আমাদের আইএমসিএস এর প্রাক্তন সদস্য ড. পৌল হাং । যিনি নিজের সর্বোচ্চটুকু দিয়ে এশিয়ার জন্য কাজ করে যাচ্ছেন, যা সত্যিই প্রশংসার দাবিদার । আমরা যুবারা তার কাছে কৃতজ্ঞ এমন একটি আয়োজন ও সুযোগের জন্য। এই প্রশিক্ষণের মধ্য দিয়ে এশিয়ার জন্য ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব তৈরি করছেন। প্রোগ্রামটি সুন্দর ও র্স্বাথক করার জন্য যিনি সব সময় সবার সাথে যোগাযোগ করেন, কখনো বিরক্ত হন না তিনি ফেলিসিয়া দিয়ান। যার সাথে আমার দেখা হয়েছিল ২০১২ সালে আইএমসিএস এর এশিয়া প্যাসিফিক কাউন্সিলে, ঢাকায়। সবসময় হাসিমুখে থাকা যার বৈশিষ্ট্য। রাত নেই দিন নেই যাকে বিভিন্ন বিষয়ের তথ্যের জন্য যন্ত্রণা দিই। এখনো দিয়ে যাচ্ছি আর এই ব্যক্তিটি মোমবাতির মত দিয়ে যাচ্ছে।


২১ জুলাই ২০১৭ ইন্দোনেশিায়াই যাবো নতুন কিছু পাবো এজন্য উত্তেজিত হয়ে আছি। আগের দিন মাত্র কলকাতা থেকে যুব কমিশনের সাথে এক্সপোজার শেষ করে ফিরে এসেছি। তারপরও মানকিভাবে প্রস্তুত নতুন অভিজ্ঞতা নেয়ার জন্য। যথারীতি বোর্ডিং পাস নেয়ার জন্য লাইনে দাড়িয়ে গেলাম। মালেশিয়াই ট্রানজিট আছে। অনেক বাংলাদেশি মালেশিয়াই যায় কাজের সন্ধানে বা কাজ করতে। এয়ারপোর্টে প্রবেশের পথেই একজন পিতাপুত্রের কান্নারত দৃশ্য দেখে নিজেকে ধরে রাখতে পারিনি। নিজের ভেতরটাও হু হু করে উঠেছে। এক অজানার উদ্দেশ্যে যাত্রা। যেখানে সে নিজেও জানে না তার জন্য কি অপেক্ষা করছে। কিন্তু তারপরও অনেকেই সুন্দর ভবিষ্যতের আশায় এমন অজানার উদ্দেশ্যে যাত্রা করে। পত্রপত্রিকায় দেখি অনেকেই নিজেদের সর্বস্ব জমিটুকু বিক্রি করে দেশের বাইরে যায় একটা কাজের সন্ধানে। বাবা মা, ভাই বোনের হাসির জন্য, সুখের জন্য। বাবা আর ভাইকে জড়িয়ে ধরে সে কি কান্না! সে এক হৃদয় বিদাড়ক দৃশ্য! এমন হাজারো প্রবাসী শ্রমিক ভাই বোনেরা প্রতিদিনই কোনো না কোনো দেশে যাচ্ছে একটু সুখের আশায়। কিন্তু সেই সুখ কি তারা পাচ্ছে? সেই সুখের সংবাদ আমরা সংবাদ মাধ্যমগুলোতে দেখি। যখন কফিন হয়ে দেশে ফিরে আসে বা আটকে রেখে টাকা দাবি করে বা অবৈধ্য হওয়ার জন্য কারাগারে বন্ধি থাকে। সেটা আমাদের সবারই জানা। বোর্ডিং পাস নেবার সময় দেখলাম, যিনি বোর্ডিং পাস দিচ্ছেন, তিনি এ মানুষগুলোর সাথে খারাপ ব্যবহার করছেন। কিছুক্ষন পর পর ধমকাচ্ছেন। অথচ এই ব্যক্তির বেতন এই শ্রমিক ভাইয়ের ঘাম থেকেই আসে, যাকে তার স্যার সম্বোধন করতে হবে; সেই ব্যক্তিটির সাথেই খারাপ ব্যবহার করছে। গ্রাম্য একটি প্রবাদ আছে‍ "নরম মাডি পাইলে, বিলায়ে আগে"। কেউ খাবে কেউ খাবে না তা হবে না। এই পৃথিবীটা সবার হতে হবে। জানি না সেই ভাইটি কেমন আছে। তারমত এমন হাজারো প্রবাসী শ্রমিক ভাইয়েরা ভালো থাকুক, তারা তাদের ন্যায্য পাওনা নিয়ে বেঁচে থাকুক। মা বাবা, ভাই বোনের মুখে হাসি ফুটুক, বেঁচে থাকুক হাজারো মা বাবা, ভাই বোনের সুখের হাসি।


প্রোগ্রামে টেকসই উন্নয়ন, মানবাধিকার, নারী অধিকার, বৈশ্বিক শান্তি, ও পরিবেশের ন্যায্যতা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তারমধ্যে টেকসই উন্নয়ন একটি। এ বিষয় নিয়ে বিস্তর আলোচনা হয়েছে। আলোচনায় বলার চেষ্টা করেছি, সমাজ থেকে বৈষম্য নামক শব্দটাকে তুলে দিতে না পারলে, এ পৃথিবীতে কখনোই টেকসই উন্নয়ন ও শান্তিপ্রতিষ্ঠা করা সম্ভব না।


ইন্দোনেশিয়াই পৌছলাম। ইমিগ্রেশনে দাড়ালাম ভিসা নেওয়ার জন্য (বলে রাখা ইন্দোনেশিয়াই বাংলাদেশিদের জন্য অনএরাইভাল ভিসা দেয়া হয়)। অফিসার জিজ্ঞেস করলো কেন এসেছি। বললাম প্রোগ্রাম আছে। কিসের প্রোগ্রাম ? সবকিছু বলার পরে একটি রুমে নিয়ে গিয়ে বসালো। রুমে গিয়ে দেখলাম যারা ভিসার জন্য অপেক্ষা করছে প্রায় সবাই বাংলাদেশি। অন্যদের মধ্যে দু’একজন অন্য দেশের আছে। আমাদের সাথে আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল, ইংল্যান্ডের নাগরিকরাও ভিসার জন্য দাড়িয়েছিল। কিন্তু সে রুমে তাদের বসতে হয়নি। আমি বিশ্বাস করি এবং সম্মান করি, প্রত্যেকটা দেশেরই একটা নিজস্ব নিয়ম আছে ও আইন কানুন রয়েছে, সন্দেহ হলে জিজ্ঞেস করবে। কিন্তু আইন যদি সবার জন্য সমান হয় তাহলে সবারই সেটা মানতে হবে। সে বড় ছোটো যেই হোক। সবাই সমান। কিন্তু অন্যান্য দেশের নাগরিকদের রুমে বসে অপেক্ষা করতে হইনি। যা আমাদের করতে হয়েছিলো। বিশিষ্ট শিল্পী ভূপেন হাজারিকার একটা গান আছে, “আমায় একজন সাদা মানুষ দাও যার রক্ত সাদা, আমায় একজন কালো মানুষ দাও যার রক্ত কালো”। এক পৃথিবীর মানুষ আমরা, কিন্তু সবাই এক হতে পারিনি! সবার জন্য সমান সুযোগ বা সমান আইন হইনি।


গল্পকার ও ঔপন্যাসিক সমরেশ মজুদার তার একটা উপন্যাসে লিখেছিলেন “গন্তব্যে পৌছার চেয়ে যাত্রাপথ অনেক সুন্দর”। বিভিন্ন দেশের প্রতিবেদন ও বিভিন্ন বিজ্ঞ ব্যক্তিদের সেশন দেখে ও শুনে এটাই বুঝতে পেরেছি আমরা এখনো যাত্রা পথেই আছি। গন্তব্যে পৌছার জন্য এখনো ঢের সময় লাগবে। কিন্তু আমি বিশ্বাস করি প্রতিটা দেশের যুবারা যদি জেগে উঠে; তাহলে সেই দিন আর দূরে নয় কাছেই চলে এসেছে। সেদিন এই পৃথিবী থেকে “বৈষম্য” নামক শব্দটি চিরতরে হারিয়ে যাবে। কেননা যুবারাই “পরিবর্তনের প্রতিনিধি”। কথায় আছে রাত যত গভীর হয়, ভোর তত নিকটে চলে আসে। নতুন ভোরে, নতুন সুর্যোদয়ের অপেক্ষায়। সুদিন আসবেই।


এক্সপোজারে যাওয়ার সময় ইন্দোনেশয়িার সৌন্দর্য্য ও বৈচিত্র্য দেখে অবাক হয়েছি। এক্সপোজারে গিয়েছিলাম তেমাঙ্গুং এ ৪ জন সামাজিক উদ্যোক্তাদের প্রজেক্ট দেখার জন্য। নিজেদের উদ্যোগে গড়ে তুলেছেন পরিবেশ নির্ভর খামার, ব্যাম্বো বাইক ও কাঠের রেডিও এর কারখানা, অর্গানিক সবজি ও কফির বাগান।ব্যক্তিতগ প্রচেষ্টায় আজ তারা সমাজে প্রতিষ্ঠিত। ব্যাম্বো বাইক ও কাঠের রেডিও দেশ ও দেশের বাইরেও উৎপাদিত হচ্ছে। এবং প্রচুর চাহিদাও আছে। নিজেদেরই প্রচেষ্টায় গড়ে তুলেছেন একটি সামাজিক বাজার। তারা মাসে ৪ বার সেই বাজারে জমায়েত হয়। বাজারে ঐতিহ্যবাহী খাবার ও ঐতিহ্যবাহী জিনিসপত্র বিক্রি করে। নিজেদের সাথে সাক্ষাৎ করেন, সময় কাটান। বাজারের বিশেষ দিক হলো বাজারে ইন্দোনেশিয়ান কোন রূপি ব্যবহৃত হয় না, বাঁশ দিয়ে তৈরি নিজস্ব মুদ্রা ব্যবহার করে কেনাকেটার জন্য। বর্তমান সময়ে নিজেদের কৃষ্টি সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখা খুউব কঠিন একটা কাজ। কিন্তু খুউব সুন্দর ভাবে তারা এটি ধরে রেখেছে। পরিবেশ নির্ভর একটি সামজিক উদ্যোগ যা সত্যিই প্রশংসার দাবিদার।

অর্গানিক সবজি ও কফির বাগান দেখে অবাক হয়ে গেছি। তাদের খামারের আশেপাশে সবাই কীটনাশক ব্যবহার করে কফি ও সবজি উৎপাদন করে কিন্তু তারা তাদের নিজেদের উদ্যোগে অগানিনক পদ্ধতিতে সবজি ও কফি উৎপাদন করে যাচ্ছে। তাদের সাথে কথা বলে এও জানলাম, স্কুলের শিক্ষার্থীরা তাদের কাছে অর্গানিক পদ্ধতিতে সবজি চাষের বিষয়ে শিখতে আসে । যা জেনে ভালো লেগেছে।

এসব সামাজিক উদ্যোগগুলো যখন দেখেছি, তখন নিজের মধ্যে একধরণের উৎসাহ কাজ করেছে। যথেষ্ট উৎসাহ পেয়েছি, যদিওবা বাংলাদেশের মত এমন একটি দেশে বাস্তবায়ন করা খুবই চ্যালেঞ্জের কিন্তু চেষ্টা করছি নিজে থেকে কিছু একটা করার। সফল না হই কিন্তু বলতে তো পারবো “আমি চেষ্টা করেছিলাম”। নিজের মধ্যে একধরণের শক্তি আবিস্কার করেছি, নতুন আমিকে খুঁজে পেয়েছি।


টেকসই উন্নয়ন, বৈষয়িক শান্তি, সংলাপ, পরিবেশ সুরক্ষা, আগামীর যুব নেতৃত্ব এরকম বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছি। নতুন করে ভেবেছি কীভাবে নতুন একটা বিশ্ব গড়ে তুলতে পারি আমরা যুবারা মিলে। কেননা, চারিদিকে “বৈষম্য” নামকটা শব্দটা আমাদের গ্রাস করে ফেলছে। মানবাধিকার কর্মী ও বিশিষ্ট কলামিষ্ট, আদিবাসী নেতা সঞ্জীব দ্রং বৈষম্যের কথা বলতে গিয়ে প্রায়ই একটা কথা বলেন, “ ধরেন আজকে যে শিশুটি আফগানিস্তানের কান্দাহারে জন্ম গ্রহণ করলো, আবার একই সাথে নরওয়ের আমস্টারডাম শহরে যে শিশুটি জন্মগ্রহণ করলো তারা কি একই সুযোগ সুবিধা নিয়ে বেড়ে উঠতে পারবে? জাতিসংঘ এসডিজি ২০৩০ গ্রহণের পর “লিভ নো ওয়ান বিহাইন্ড’ কথাটি এখন বেশ আলোচিত হচ্ছে। অর্থাৎ কাউকে পেছনে ফেলে রাখা যাবে না। কিন্তু বিশ্বে এটাই বেশি আলোচিত হচ্ছে। আমরা একটি অসাম্প্রদায়িক, উন্নত ও মানবিক বিশ্ব দেখতে চাই। যেখানে সবাই সমধিকার নিয়ে বসবাস করবে। একটি গান আছে ঈশ্বরের কাছে নিবেদন করে, “আমায় তোমার শান্তির দূত করো”। আমরা যুবারাও যেন এইভাবে একত্রিত হয়ে এই গানটি গাইতে পারি। কেননা সময় এসেছে জীবনের সঙ্গে জীবন মিলাবার। পরস্পরের সাথে সেতুবন্ধন রচনা করার। নতুন প্রজন্মের জন্য নতুন একটি বিশ্ব উপহার দেবার।

Comments


S__58408971_0.jpg

About Me

"Committed to empowering youth, advocating for the rights of indigenous peoples and environmental justice, driving social transformation...,"

Follow me 

  • Facebook
  • Instagram
  • Twitter

Join My Mailing List

Thanks for submitting!

© 2023-2024  by ©wnokrek

bottom of page